নীল বিদ্রোহ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলায় নীল ব্যবসায়ী ও নীলকরদের বিরুদ্ধে শোষিত নীল চাষীদের প্রতিরোধ আন্দোলন। ১৮৫৯ সালে যশোর ও নদীয়ায় এ আন্দোলনের সূচনা হয় এবং দ্রুত সমগ্র বাংলায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহের পিছনে কাজ করে অর্ধ শতাব্দী ধরে নীল চাষীদের উপরে নির্মম নিপীড়ন ও নীল চাষ আইন প্রণয়ন। [১] প্রথমদিকে নীল চাষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া অধিকারে ছিল। ১৮৩৩ সালের সনদ আইনের ফলে তাঁদের একচেটিয়া অধিকার লোপ পায় এবং ব্রিটেন থেকে দলে দলে ইংরেজ নীলকররা বাংলায় আগমন করে ইচ্ছামত নীলের চাষ শুরু করে। তখন থেকেই কৃষকদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। ফলে ১৮৫৯ ফেব্রুয়ারী – মার্চ মাসে নীলচাষীরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে নীল চাষ করতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রথমদিকে এই আন্দোলন অহিংস ছিল, কিন্তু নীলচাষ না করার কারণে চাষীদের ওপর ভয়ানক নির্যাতন, গ্রেপ্তার শুরু হলে এ আন্দোলন সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়। এই বিদ্রোহ বাংলার প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীদেরও সমর্থন লাভ করে, বিশেষত চাঁদপুরের হাজি মোল্লা, যিনি ঘোষণা দেন নীলচাষ থেকে ভিক্ষা উত্তম। [২]
নীল বিদ্রোহ দমন করার জন্য ইংরেজ সরকার ১৮৬০ সালে 'নীল কমিশন' গঠন করে। এই কমিশন সরেজমিনে তদন্ত করে চাষিদের অভিযোগ যথার্থ বলে অভিমত দেয়। ফলে সরকার নীলচাষের ওপর একটি আইন পাস করেন। এতে ১৮৬২ সালে নীল বিদ্রোহের অবসান হয়। ১৯০০ সালের মাঝে নিশ্চিন্তপুরের নীলকুঠি উঠে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলায় সম্পূর্ণভাবে নীলচাষের অবসান ঘটে। [৩]
নীল চাষের পটভূমি সম্পাদনা
নীল কারখানা
প্রাচীন ও আধুনিক নীলচাষ সম্পাদনা
প্রাচীন কাল থেকেই বাংলায় নীল চাষ প্রচলিত ছিল। ভারতীয় ভেষজ বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে, প্রাচীন প্রতিমূর্তির বর্ণে, অঙ্কিত পট ও চিত্রে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইংরেজিতে নীল indigo নামে আর গ্রিক ও রোমান ভাষায় indicum নামে পরিচিত। উভয় শব্দই india শব্দের সমার্থবোধক। আবার প্রাচীন দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মাঝে নীলের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। তারা সিন্ধু নদের (the indus) তীরে বাস করত। এজন্য ধারণা করা হয় এদেশেই নীল চাষের উৎপত্তি। [৪]
লুই বন্ড নামের একজন ফরাসি বণিকের মাধ্যমে এদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে নীলচাষ ও এর ব্যবহার প্রচলন ঘটে। তিনি ১৭৭৭ আমেরিকা থেকে প্রথম নীলবীজ ও আধুনিক চাষের পদ্ধতি এদেশে নিয়ে আসেন। একই বছরে হুগলী নদীর তীরবর্তী গোন্দালপাড়া ও তালডাঙ্গা গ্রামে তিনি সর্বপ্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন। [৫] এর কয়েক বছর পরে মালদহে, ১৮১৪ সালে বাকিপুরে, এবং তারপরে যশোরের নহাটা ও কালনাতে নীলকুঠি ও কারখানা স্থাপন করেন। ১৮২০ সালে কালনা থেকে প্রায় দেড় হাজার মণ পরিশোধিত নীল রপ্তানি করে বন্ড উপমহাদেশ ও ব্রিটেনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। ১৮২০ সালে তার মৃত্যু হয়। [৬]
বাংলায় নীলচাষের প্রসার সম্পাদনা
লুই বন্ডের এক বছর পর ক্যারল ব্লুম নামের একজন ইংরেজ কুষ্টিয়ায় একটি নীলকুঠি স্থাপন করেন। [৭] তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নীলচাষে বিপুল মুনাফার কথা অবহিত করে দ্রুত নীলের কারবার শুরু করার আহ্বান জানান ও ১৭৭৮ সালে গভর্নর জেনারেলের কাছে এই বিষয়ে সপারিষদ একটি স্মারকপত্র দাখিল করেন। [৮] অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে বস্ত্রশিল্পের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয় এবং কাপড় রং করার জন্য নীলের চাহিদা শতগুনে বেড়ে যায়। ফলে ওই সময়ে নীল চাষের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক হয়ে ওঠে।
কোম্পানি লাভের সম্ভাবনা দেখে শীঘ্রই সমস্ত কারবার হস্তগত করে নেয়। এক হিসাব থেকে দেখা যায়, ১৮০৩ সাল পর্যন্ত নীল চাষে যে খরচ হত, তার সবটাই কোম্পানি অল্প সুদে অগ্রিম প্রদান করত। এতে যে নীল উৎপাদিত হত, তার সবটাই যেত ইংল্যান্ডে এবং কোম্পানি বহুগুণ বেশি লাভ করত। এই ব্যবসা এতই লাভজনক ছিল যে, বহু কর্মচারী ও সরকারি আমলা চাকরি ও রাজনীতি ছেড়ে নীলচাষের কারবারে আত্মনিয়োগ করে। বহু দেশীয় জমিদার ও মহাজন ব্যক্তিগতভাবে বা যৌথ মালিকানায় কারবার খোলে এবং ১৮১৫ সালের মধ্যে নদীয়া, যশোর, খুলনা, ২৪ পরগণা, বগুড়া, রাজশাহী, মালদহ, পাবনা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল প্রভৃতি জেলায় অসংখ্য নীলকুঠি গড়ে ওঠে। এসব এলাকার নীলের খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যবঙ্গের উৎকৃষ্ট নীলের ব্যবসা করে রাতারাতি ধনী হবার কাহিনি সকল ধনিক ও বণিক সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করে এবং ক্রমশ ফরাসি, ডাচ, পর্তুগীজ, দিনেমার প্রভৃতি দেশের ধনিক গোষ্ঠীও দলে দলে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। [৯]
নীল চাষের প্রসার দেখে বাংলার শীর্ষস্থানীয় মুৎসুদ্দি, নব প্রতিষ্ঠিত জমিদার গোষ্ঠী ও উদীয়মান শহুরে শ্রেণী নীলকরদের সুযোগ-সুবিধা ও নীলচাষের প্রসারের জন্য আন্দোলন শুরু করে। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ সরকারের সুনজরে থাকা। এদের মাঝে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায় অন্যতম। তারা ১৮২৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ক
Thanks. It will help me very much.thanks
ReplyDeleteWelcome
DeleteProkashssarkar6294
ReplyDelete@ggimail.com
Thanks it's help me very very much
ReplyDeleteThankes it will be help to all studentes
ReplyDeleteWow
ReplyDeleteWhere is the rest of the write up?
ReplyDelete